স্মৃতিকথামূলক গল্প: চাঁদ রাত- কামরান চৌধুরী
২০১৯ সাল। ২৯শে রমজান। গ্রামের বাড়িতে ইফতারের পর সবাই চাঁদ দেখা কমিটির ঘোষণা শোনার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম। পাড়ায় পাড়ায় শিশু থেকে শুরু করে বয়োঃবৃদ্ধদের একটাই কৌতূহল “ঈদুর চাঁদ দেহা গেইয়্যি নে?”। এভাবে সন্ধ্যার পর অপেক্ষা করতে করতে অতঃপর মসজিদে এশার আজান হলো। ইমাম সাহেব মোটামুটি আত্মবিশ্বাসের সাথে বলতে লাগলো “ আঁর মনে অয় এবারর ঈদ ত্রিশশো অইবু। চাঁদ দেহা ন যায়। এশারর নামাজর ফর তারাবী অইয়বু ”। এই কথা শুনে মুরব্বিরা এশারের নামাজ পড়তে চলো গেলো। এশারের পর তারাবী হলো। সেদিন ২৯ তারাবী নামাজেত যে যুবকেরা উপস্থিত ছিলো, ৩০ তারাবীতে অধিকাংশই ছিলো না। বেশির ভাগই ঈদের চাঁদ দেখার অপেক্ষায় ছিলো। আমিও এশার নামাজ পড়ে আর তারাবী পড়িনি।
রাতে আকাশ ভর্তি ছিল কালো মেঘে ঢাকা। কোথাও চাঁদের চিহ্নমাত্র নেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে টেলিভিশন। কোথাও কোনো চাঁদের খোঁজ নেই। অন্যদিকে চাঁদ দেখা কমিটির ঘোষণা নিয়ে চলছিলো নানা রকমের গুজব। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নিউজফিড ছিলো গুজবে গুজবে সয়লাব। তারপর আমরা যারা তারাবীর নামাজ পড়িনি, সবাই মিলে সেদিন জামায়াতের সাথে এক বড় ভাইয়ের ইমামতিতে নামাজ আদায় করলাম।
রাত ১১টা। আমি এবং আমার পাড়ার একজন বড় ভাই তাঁর বোনের বাড়িতে যাওয়ার জন্য বাইকে করে বেরিয়ে পড়েছিলাম। চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। অন্যদিকে বিল থেকে শোনা যাচ্ছে ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক। থমথমে গ্রাম্যপথ-ঘাট। তবুও আকাশে সেই চাঁদের দেখা নেই। অতঃপর আমরা গন্তব্যে পৌঁছালাম। যেই বাইক থেকে আমরা বোনের বাড়িতে ঢুকবো তখনই পাড়ায় শিশুদের আনন্দে জড়ানো একটি আওয়াজ আমরা শুনতে পাই “ চাঁদ দেহা গেইয়্যি, চাঁদ দেহা গেইয়্যি, হালিয়ে ঈদ।”
মসজিদে মসজিদে মাইকিং হলো। ঈদের চাঁদ দেখার কথা ছড়িয়ে পড়তে লাগলো। আমরা ফেসবুকে ঢুঁ মেরে শিউর হয়ে নিলাম, আসলেই দেখা গিয়েছে কিনা। আসলেই সত্য। চাঁদ দেখা গিয়েছে। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি মেঘ সরে গিয়ে চাঁদের হালকা মুখ দেখা দিয়েছে। সেই সময়ে হয়তো মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের খুশীর জন্য কালো মেঘকে সরিয়ে দিয়ে ঈদের চাঁদকেই পুরো আকাশ জুড়ে খুশীর আলোয় পূর্ণ করলেন। সুবাহান আল্লাহ। সেদিন ঘরে ঘরে খুশীর আনন্দ বয়ে গেলেও প্রায় মানুষ জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটিকে ‘অর্কমা’ উপাধী দিয়েছিলো। হয়তো এটি তাঁদের প্রাপ্য। তবে মনে রাখতে হবে আল্লাহর হুকুমে পুরো পৃথিবী এখনো ঘুরছে।
*কামরান চৌধুরী- সম্পাদক, লেখালয়।