হেলাল সালাহ উদ্দীনের কবিতা
অভিসার
তখন জ্যোৎস্না শুয়েছিলো পাতায়, ধানখেতে-
নির্জন পুকুরের কোণায়।
শরতের রাতে,
তাঁর চোখ থেকে খসে পড়েছিলো অপূর্ব নীহারিকা,
থরথর তনু বিদ্যুৎ প্লাবনে ঝড়ের কবলে পড়া সেগুন গাছের মতো দুলেছিলো।
অঙ্গুলি বেয়ে টুপটুপ প্রেমের পারদ গলে গলে ঢলে পড়েছিলো:
গালে, গ্রীবায়।
কপালজুড়ে নদীর ঢেউ,
ওষ্ঠে সুমিষ্ট মধু ঝরনার মতো ঝরেছিলো।
স্তব্ধ পুকুরপাড়, কাশফুলের দোলায়-
দুলেছিলো জোনাকিরা।
ছাতিমের ডালে শিস দিয়েছিলো জোড়া শালিক;
জ্যোৎস্নায় মায়ায় মনোহর ধরণি-
সাদা আলোর প্রশান্ত ভেলায় চড়ে দিগন্তরেখা ছুঁয়েছিলো।
উদ্ভিন্ন ফুল সুবাস বিভোর,
স্পর্শে গোলাপি আভায় ফুটেছিলো:
কোমল ননীর মতো।
আকাশে কেঁপেছিলো চাঁদ।
মানুষের কথা
শূন্য অরণ্যে কীসের লড়াই করে মানুষ! চারিদিকে বিপুল কষ্ট নদী, রক্তাক্ত হাহাকার, বিশ্রান্ত ক্ষরণ-
টইটই হেঁটে যায় অন্ধকারে; মানুষ দুঃখ পোহায়, ক্লান্ত শরীর জড়াজড়ি করে ঘুমোতে যায়-
স্বান্তনা, প্রেম নিয়ে বেঁচে থাকে ক্ষুদ্র সংসারে; শরীরের প্রয়োজনে- কামে, ভালোবাসায়- ভরসায়।
শিশুরাজ্যে অলীক প্রজাপতি হয়ে, নীরব নির্ভরতায়!
মাঠে, কাদায় মাখামাখি বিল-ঝিলে; কেবলই করে জীবন ক্ষয়।
বিনিময় মুদ্রা : অবচেতনে জপে তসবির দানা, ভালো থাকবে আরো ভালো থাকবে সে! কবে?
মন মরেছে, শরীর হয়েছে গাধা; নিত্য বেচে দেয় নিজেকে বেচারা!
আশা নিরাশার সাগরে ভেসে যায় শ্যাওলার মতো, অচিন নিরুদ্দেশে, এই জীবনের পথচলা?
কেউ মুদ্রায় অধিকার করে- অনেক জীবনের বিপন্ন করুণ, ভোগ্য ভাবে প্রকৃতি প্রাণ! বেলা শেষে ভোগীরও অবসান।
সব মিথ্যাচার, বানানো কপট- সত্য হলো সকলই মিথ্যা! মানুষের কীসের লড়াই?
জানে না মানুষ, বেহুশ পতঙ্গের মতো পুড়ছে আগুনে।
আসন্ন সবুজ দিন মানুষের হবে।
এই স্বপ্ন নিয়ে অনেক আদিম ভোরে ঘুরেছিলো যাঁরা, নিবিড় কুয়াশায় ঢেকেছে তাঁদের কবর!
সে সংক্রামক স্বপ্ন শতকে শতকে ছুঁয়ে দেয়- রাঙা গালের কোমল টোল, অজস্র বছর পরে- শরতের রাতের থমথমে নিস্তব্ধতায়, আরও কেউ লিখে যাবে- মানুষের কথা।
আরাধ্য ঘুমে
কী এক ঘোর ভ্রম সংরাগে অপচয় করি আমাদের অমূল্য সময়,
সময়ের নিরুক্ত উচ্ছ্বাসে, সুনীল আলোতে- পা ধুয়ে- ভুলে থাকি আশঙ্কা, আনন্দের রোদ;
খলখলে দলখে সাঁতরানো হাঁসেরা, আনন্দের ফোয়ারা ঢেলে, সারা উঠোন বুনে দেয় মুখরতা।
অনিশ্চিত ঠান্ডা ঘুমে- নগরীর রূপসী মেয়ে, নিশ্চুপ কলহাস্যে : শান্ত নিষ্প্রাণ!
হাওরের বুকছোঁয়া জলে দাঁড়িয়ে থাকা হিজলগাছ, টলমল জলে ভেসে থাকা পানকৌড়ির- মরমে দেউল সুর।
দেহ-মনের দারুণ ভ্রমণ শেষে, গ্রহ-নক্ষত্র কেবল ঘুরেঘুরে আসে!
মাটিতে ক্ষয়ে যাওয়া করোটি, মানুষ অনিবার্য সন্ন্যাসের রিক্ততায়- নিহাল বেদনা বিবরে ঘুমায়।
আরো পড়ুন- সাঈদা আজিজ চৌধুরীর কবিতা