সজীব হুমায়ূনের কবিতা
আগুনঝরা নির্জনতা
আমার জন্য ভয়ংকর এক তীব্র ঘৃণা
শূন্যতা বুকের মধ্যে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ছিল।
শূন্য বুক নিয়ে বাকরুদ্ধ আমি কোন শব্দ বলতে পারিনি
সেদিন কিছু না বলেও অনেক কিছু বলেছিলে,
তোমার বুকে দেখেছিলাম ;
আমার জন্য তীব্র শূন্যতা -
বুকের মধ্যে হুহু করে বাড়তে থাকে অসহ্য দহন
আমি পুড়তে থাকি অবিরত তোমার অনলে
সূর্যের দহনে যেমন পৃথিবী পোড়ে প্রতিনিয়ত
সে এক পৃথিবী দুঃখ পুষে রাখি বুক পকেটে
যন্ত্রণারা যেন নিরাপদ আশ্রয়ে থাকে অবিচল
জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা প্রবাহমান
যেমন নদীর স্রোত আবহমান কাল ধরে
বয়ে চলে উদ্দেশ্যহীন এক অজানা ঠিকানায়
ভোরের আলো ফুটতেই নিশিজল যেমন হাওয়ায় মিলায়
বকুল ফুলের গন্ধে ভাসে এক সন্ধ্যা
কনে দেখা আলোয় ঝলসে যায় বিকেলের নির্জনতা
নির্জনতা ভেঙে রাত নেমে আসে
আঁধারে মিলায় দুঃখ পুষা পাখি বিষাদ জমে মেঘ হয়
সে মেঘ নোনাজল হয়ে ঝড়ে তিন প্রহরের মধ্যভাগে
কর্ণকুহুরে ভাসে তোমার গলার স্বর
কিংকর্তব্যবিমুঢ় আমি এবং পাঁচ দুপুরের নির্জনতা
জানালায় দাঁড়িয়ে থাকে মধ্য রাতের নিষ্পলক বিষন্নতা
হাসফাস লাগে তবুও এ কেমন নীরবতা
সেদিন তোমার চোখে দেখেছিলাম
আমার জন্য ভয়ংকর এক তীব্র ঘৃণা ।
বিষণ্ন বিবর্ণ গ্রাফিতি
কবিতা -
আমার অভিমানেরা বেওয়ারিশ লাশ
তোমার অভিমানেরা আঁকে আমার
নির্বাসনের নিদারুন গ্রাফিতি।
নিশাজলে স্বর্ণচূড়া হাসে
অন্তিমযাত্রায় পিছু ডাকে ফাগুন,
উঁকি দেয় স্মৃতি স্মারক
উম্মাত আকাঙ্ক্ষার অন্তরেখা টেনে।
কবিতা -
যোগাযোগ নিভে যায় বাড়ে দূরত্ব
সন্ধ্যায় ঘরে ফেরার তাড়া নেই
চৌকাঠে অপেক্ষায় থাকে না কেউ
আশাহতের মত বিবর্ণ ধূসর প্রান্তরে
ধ্বনি-প্রতিধ্বনির অন্তরেখা টেনে,
দিয়ে যাবো অভিমানের দেয়ালে
নির্বাসনের নিদারুন গ্রাফিতি।
কবিতা -
তোমার বুকের তৃপ্তির পরশে
বিষাদচূড়া আমার চুকে যায়
ম্লান হয়ে যায় নিদারুণ জীবনের স্রোতস্বিনী
সুখ কি তবে ধোঁয়ার মতো ক্ষণ?
তোমাকে ছোঁয়ার তৃষ্ণায়
নিস্তব্ধতার পসরা সাজাই অলক্ষ্যে
এ নেশা অমোচনীয়।
কবিতা -
জনরণে ফেনীল রঙ ছড়ায় দক্ষিণ দুয়ারী স্রোতে
যবনিকাপাত নিদারুণ তোমায় অবলোকনের ধারাপাত।
অস্তিত্ব অস্ত যায় না -
অর্থহীন প্রলাপ কর্ণকুহরে
বিভক্ত শহরে অভিমানের পসরা সাজিয়ে
তোমার অভিমানেরা আঁকে আমার
নির্বাসনের নিদারুন গ্রাফিতি।
বিমুগ্ধতা
কে তুমি?
আমি হলাম তোমার ভোরের ঘুম
তোমার শেষ সন্ধ্যার অবসর !!
মধ্যে দুপুরের দু-চারটে কথা।
কেন এখানে?
কোন এক বসন্তের শেষ বৃহস্পতিবারের
মধ্যে রাতে ভেসে আসা লেবুফুলের গন্ধে
তোমার মাদকতায় বিভোর হতে এসেছি।
কেন এতোদিন পরে?
শতাব্দী থেকে শতাব্দী তোমার জন্য
আবহমান নদীর স্রোত হয়ে মিশে ছিলাম
তোমার আঙিনায় অনুভূতির মলাটে।
তুমি খুঁজোনি কখনো আমায়
ভোরের কাঁঠালীচাঁপার গন্ধে।।
যদি মনে পড়ে
আমাকে মনে পড়লে
হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিও,
শরতের কাশফুল!!
আমি মিশে আছি
শিশির ভেজা নরম ঘাসে ,
তুমি নগ্ন পায়ে হেঁটো।
আমাকে মনে পড়লে
আষাঢ়ের বৃষ্টি ভেজা,
স্নিগ্ধ সন্ধ্যায় আকাশের
ঐ সাত রঙা রংধুনের পানে চেও ।
শ্রাবণের কৃষ্ণচূড়া হাতে তপ্ত বিরহে
শেষ বিকেলের রক্তিম আভার পানে,
ছুঁড়ে দিও না বলা শব্দমালা।
অপেক্ষা হীন চৌকাঠ
আসছে হাসনা-হেনা ফুলের ঘ্রাণ
পিচঢালা পথে শরতের কান্নায় ভিজছে
কারো প্রিয় শিউলী ফুল!
ঘরে ফেরার তাড়া নেই,
নেই কেউ অপেক্ষায়।
চৌকাঠে দাঁড়িয়ে উতলা হয়ে
কেউ সময়ের পিছু নিবে না,
পথে হলো দেরি -
কেউ কৈফিয়ত চাইবে না।
রাতে খাবার নিয়ে কেউ
ঘুম চোখে বসে থাকবে না।
আবছায়া
আলো আঁধারিতে দীর্ঘশ্বাসেরা
তোমার আদল এঁকে যায় দেবী,
অস্পষ্ট অস্পর্শীয়া শারদ সজ্জার এই শরতে
বুনো উল্লাসে মত্ত থাকে বিষন্ন মেঘেরা।
তোমার শহরে চোখবন্দী মানুষের
শত ব্যস্ততার ছড়াছড়ি ,
আমার উঠোনে শেষ আলোয়
তোমার আদল এঁকে যায় দেবী।
জমে থাকা স্বপ্নের বালুকণা
সন্ধ্যাস্নানে যাবে তুমি -
অথচ আঁধার এসে দাঁড়ায়
আমার দুয়ারে ।
তোমার খোঁপায় আকাশ ভেঙ্গে মেঘ নামে
অবহেলায় পড়ে রয় প্রিয় বেলিফুল,
শেষ রাতের অস্পষ্ট আলোর মতই
তুমি ঝাপসা দেবী ।।
আরো পড়ুন- সুশান্ত সেনের কবিতা