অনন্ত পৃথ্বীরাজ-এর পাঁচটি কবিতা
শীতের ত্রস্ত্র
কুয়াশার ক্রীম মেখে
উত্তরীয় হিমানী মেয়ে
উষ্ণতার অপেক্ষায় থাকে।
রোদ চাও, সূর্যের উত্তাপ
পূর্ণিমা ম্রিয়মান, চন্দ্রগ্রহণকাল
এখন মাঘের শীত!
হিম হিম ঠান্ডায় জবুথবু, শ্বাসকষ্ট
থুত্থুরে বুড়োটা খক খক কাশে।
তালপাতার পাখা
তেল চিটচিটে বালিশে মাথা রেখে
পৌষের অবেলায় খোসা ছাড়িয়ে বাদাম খাওয়ার মতো
মিষ্টি বিকেলগুলো হারিয়ে যাবার আগে, চলো-
সংসারের গাঁটসূতো বেঁধে পাড়ি দেই বিয়ের নদী।
চলতি পথে দুর্ঘটনা বলে আসে না কো
ভ্যানগগের প্রট্রেটে কর্ণবিহিন মনুষ্য অবয়ব
ঠিক ভিনগ্রহের এলিয়েনের মতো লাগে।
কালোচোখে ঘোমটাপরা
কেবল অন্ধই চোখের মর্ম বোঝে-
ধনীদের ধমনীর উপরে থাকে একজোড়া নকল চোখ
পৃথিবীর মায়াবি মানুষগুলো রঙিন মাছের মতো
নিজেদের চালাক ভেবে- কেবলি লাফায়।
ওরা কি তবে কখনো ঘুড়ি ওড়ানো দেখেনি
যতই উপরে যাও, সুঁতো টেনে টেনে
নামিয়ে আনা হয় পাখির পাখনা।
পর্দায় কালোকফির ধোঁয়া ওঠা সুখটানে খাবি খেওনা।
পালশালায় নৃত্যরত রমণী মূর্তি; অঙ্গের কারুকার্য,
বাহারি লতাপাতায় ঘিরে নেয়- টিন এজের সোনালি যৌবন।
তখন উঠতি কইমাছগুলো বৃষ্টির ছলাকলায়-
ঢেউ খেলে স্নিগ্ধ বাতাসে।
ও চোখ মানুষ দেখে না
হিংস্রজন্তু গিলে খায় পুরুষের কৈশোর।
শীতনিদ্রা
বাংলার জলে কে মেশালো হিমবাহ!
বরফ পাতায় সাজানো হয়েছে টিপকল
গাঙের উপর ধোঁয়া ওঠা ভেজা বাতাস
ভোরের পৃথিবীকে কানমলা দেয়
শীতের ঠকঠক।
ওহে গরিব, কোনো কথা নয় চুপটি মেরে
বসে তুমি কেবল কাঁপতে থাকো!
অতঃপর তুমি এসেছিলে
বিকেলের মিহি রোদ ঝরে পরে রাত্রির গুহায়-
চিলেকোঠার চৌকাঠে প্রত্যহ অপেক্ষায় থাকি
তবু তুমি আসো না কেন?
বাসার ছাদে শুকনো পাতার মর্মর শব্দ
কানে বাজে বৈকালিক চুড়ির নিক্কন
মানুষের হাঁটাচলা কমে যায়,
জামা-কাপড়ও শুকিয়ে গেছে!
অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ফিরি
তুমি তবুও আসো না কেন?
বিষণ্ন বিকেলে, সারাদিনের ক্লান্তি নিয়ে
দরজার চৌকাঠে উঁকি দেই।
এদিক ওদিক পায়চারি খাই-
ব্রাশে পেস্ট মেখে দাঁত মাজার অভিনয় চলে,
সব বোঝো অথচ তুমি আসো না কেন?
কদিন আগে এক দাঁড়িওয়ালাকে
বের হয়ে যেতে দেখেছিলাম,
তোমাদের কড়িডোর থেকে
বড্ড খুশি খুশি মনে হয়েছিল তাকে-
আমার মনে কী এক অজানা সন্দেহ দানা-বাধে
তবুও তুমি এলে না কেন?
তোমার দরজার চৌকাঠে অসংখ্য বার
কড়া নাড়তে গিয়েও আটকে গেছি,
হিতে বিপরীত হতে কতক্ষণ তুমিই বলো
তবুও তুমি একবারও এলে না কেন?
জানি, সামনের মাসে তোমার বিয়ে-
আমাদেরও নতুন বাসা ঠিক হয়ে গেছে ।
কাল সেখানে চলে যাব-
তবুও কি তুমি আসবে না একবারও !
সেদিন গভীর রাতে
মেয়েটি চিলেকোঠার বসায় এসে হাজির !
আরো পড়ুন- আশরাফ চঞ্চলের কবিতা